সেপ্টেম্বরের এক সন্ধ্যা। আকাশ কালো মেঘে ভরে আছে, হাওয়ায় অদ্ভুত একটা ঠান্ডা গন্ধ। তানিশা সারাদিনের কাজ শেষে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। বাইরে ঝুম বৃষ্টি, মাঝে মাঝে বিদ্যুতের ঝলক।
মনের মধ্যে এক অজানা অস্থিরতা। আজ অর্ণব আসবে বলে সে সারাদিন অপেক্ষা করেছে। কলেজ জীবনের বন্ধু, ধীরে ধীরে প্রেমে পড়া, আর এখন গোপনে দেখা—সবকিছু যেন এক অদ্ভুত মাদকতায় ভরে গেছে।
ঘড়িতে রাত আটটা বাজতেই দরজায় টোকা। তানিশা দৌড়ে গিয়ে খুলে দিলো। ভিজে কাপড়ে দাঁড়িয়ে অর্ণব। শরীর থেকে ঝরে পড়ছে বৃষ্টির পানি।
তানিশা: (চোখ বড় বড় করে) এত ভিজে এলে? গায়ে ঠান্ডা লাগবে তো!
অর্ণব: (হেসে) ঠান্ডা আমি সামলে নেবো… তোমার কাছে এলে গরম হয়ে যাই।
তানিশা লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে নিলো। কিন্তু বুকের ভেতরে কেমন অদ্ভুত একটা শিহরণ বয়ে গেল।
অর্ণব ঘরে ঢুকে দরজা লাগাল। বাইরে তখনো বৃষ্টির শব্দ, বিদ্যুতের আলো একবার আসছে, আবার যাচ্ছে। ঘরটা আধো অন্ধকার।
কাছাকাছি আসা
তানিশা আলমারি থেকে তোয়ালে এনে দিলো। অর্ণব চুপচাপ মাথা মুছছিলো। মাঝে মাঝে চোখে চোখ পড়ে যাচ্ছিলো। দুজনের ভেতরেই জমে উঠছিলো নীরব উত্তেজনা।
অর্ণব: (ধীরে ধীরে) জানো, এই বৃষ্টির রাতে তোমার কাছে আসার জন্য সারাদিন অপেক্ষা করেছি।
তানিশা: (মৃদু গলায়) আমিও… কিন্তু যদি কেউ জানে?
অর্ণব: (হেসে) ভালোবাসা লুকিয়ে রাখা যায়?
সে ধীরে ধীরে তানিশার হাতটা ধরে ফেললো। তানিশা কিছু বললো না, শুধু মাথা নিচু করে রইলো।
মুহূর্তের আবেশ
অর্ণব তার চুলের ভেজা গন্ধ শুঁকে নিলো। তানিশার শরীর হালকা কেঁপে উঠলো। জানালার বাইরে ঝড়ো বাতাসে পর্দা দুলছিলো।
হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেল। ঘর ভরে গেল অন্ধকারে। শুধু বৃষ্টির শব্দ আর বুকের ধুকপুকানি।
অর্ণব আস্তে করে তার কাঁধে হাত রাখলো।
তানিশা চোখ বন্ধ করে মাথা রাখলো অর্ণবের বুকে। সেই মুহূর্তে যেন পৃথিবী থেমে গেল।
অর্ণব: (ফিসফিস করে) আমি চাই এই রাতটা শুধু আমাদের হোক…
তানিশা: (কাঁপা গলায়) যদি সকাল কখনো না আসে?
অর্ণব: তাহলে এই রাতটাই হবে আমাদের চিরকাল।
গোপন প্রতিশ্রুতি
তাদের দূরত্ব আর থাকলো না। চারপাশের অন্ধকারে তারা একে অপরকে জড়িয়ে রইলো। নীরবতার ভেতর মিশে গেলো বৃষ্টির ছন্দ আর শরীরের উষ্ণতা।
তানিশা প্রথমে একটু দ্বিধায় ছিলো, কিন্তু অর্ণবের হাত ধরে ধীরে ধীরে সে নিজেকে ছেড়ে দিলো। মনে হচ্ছিল, এই মুহূর্তের বাইরে আর কিছু নেই—না দুনিয়া, না সমাজ, শুধু দু’জন মানুষের অদ্ভুত এক মেলবন্ধন।
নতুন ভোর
রাত গড়িয়ে ভোর হলো। বাইরে বৃষ্টি থেমে গেছে, আকাশে লাল আভা। জানালার ফাঁক দিয়ে আলো এসে পড়ছে ঘরে।
তানিশা মাথা রেখেছিলো অর্ণবের কাঁধে। তার চোখে তখনো ঘুম, মুখে একরাশ শান্তি। অর্ণব আস্তে করে তার চুলে হাত বুলিয়ে দিলো।
অর্ণব: (মৃদু হেসে) তুমি আমার কাছে শুধু প্রেমিকা নও, তুমি আমার পৃথিবী।
তানিশা: (চোখ মেলে তাকিয়ে) আর তুমি আমার কাছে শুধু স্বপ্ন নও… তুমি আমার বাস্তব।
তারা দু’জন জানতো—এই সম্পর্ক সহজ নয়, সমাজ মেনে নেবে না। কিন্তু তবুও, সেই বৃষ্টির রাতে তারা যে প্রতিশ্রুতি দিলো—একসাথে থাকার, ভালোবাসাকে বাঁচিয়ে রাখার—সেটাই হয়ে উঠলো তাদের জীবনের আসল সত্যি।