আজকের সন্ধ্যা একটু ভিন্ন ছিল। শীতের হালকা হাওয়া আর আকাশে নরম গোলাপি রঙের ছোঁয়া, যেন সমস্ত পৃথিবী থেমে গিয়ে শান্ত হয়ে গেছে। দীপা ও অর্পিত একে অপরকে নিয়ে বাইরে পায়ে হেঁটে যাচ্ছিল।
সপ্তাহের শেষে, কাজের চাপে একে অপরকে অনেক কম সময় দেওয়া হয়। কিন্তু আজ, তাদের মধ্যে একটি বিশেষ মুহূর্ত ছিল— একে অপরকে অনুভব করার, একে অপরের জন্য সময় বের করার।
দীপা অর্পিতের হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে বললো, “আজকে মনে হচ্ছে সময়টা যেন একটু থেমে গেছে।”
অর্পিত মুচকি হাসলো, “তুমি তো সব সময় খুব ব্যস্ত, আজ একটুখানি সময় পেয়েছো আমাকে?”
দীপা একটু হাসলো, “এটা তো তুমি জানো, অর্পিত, তোমার সঙ্গে থাকলে সময় দ্রুত চলে যায়।”
অর্পিত স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে এক মুহূর্ত চুপ থাকলো। তারপর বললো, “তুমি জানো, দীপা, আমি তোমার প্রতি কৃতজ্ঞ। আমাদের জীবনে অনেক কিছু এসেছে, কিন্তু তুমি সব সময় পাশে ছিলে।”
দীপা একটু অবাক হয়ে তার চোখে তাকালো। “কী বলছো তুমি? আমি তো সঙ্গেই আছি।”
অর্পিত হাতটি দীপার হাতে ফেলে দিয়ে বললো, “কিন্তু, কখনো কখনো আমি ভাবি, তুমি আমাকে যা কিছু দিয়েছো, তার জন্য আমি কিভাবে তোমাকে ধন্যবাদ দেবো?”
এ কথায় দীপা অবাক হয়ে চোখ ঘুরিয়ে নিলো। “এটা তো তোমার প্রাপ্য। তুমি আমার স্বামী, আমার জীবনসঙ্গী, তুমি না থাকলে আমি অসম্পূর্ণ।”
তারা একে অপরকে এক মুহূর্তের জন্য একদৃষ্টিতে দেখলো। তারপর, হঠাৎ করে, অর্পিত তার স্ত্রীর হাতে একটি ছোট্ট সোনালী ব্রেসলেট পরিয়ে দিলো। দীপা চোখ বড় করে তাকালো, “এটা… কোথা থেকে পেলো?”
অর্পিত হেসে বললো, “আমার মনে হয়েছিল, তুমি যে সোনালী রঙটা পছন্দ করো, সেটা তোমাকে কিছুটা বিশেষ অনুভূতি দিবে।”
দীপা গলায় একটুখানি আঙুল দিয়ে ব্রেসলেটটা স্পর্শ করলো এবং চোখে জল এলো। “তুমি জানো না, অর্পিত, তুমি যদি আমাকে শুধু এই রকম ছোট ছোট মুহূর্তগুলো দিয়ো, তবে আমার কাছে এর চেয়ে বড় কিছু আর চাই না।”
অর্পিত তার স্ত্রীর মুখে নরম হাত দিয়ে বললো, “তোমার প্রতিটি হাসি, প্রতিটি চোখের আভা— আমার জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে বড় উপহার।”
তাদের মাঝে এক মুহূর্তের নীরবতা। বৃষ্টি আসল, তবে এটা ছিল এক রোমান্টিক বৃষ্টি— যে বৃষ্টি মাথায় পড়লে মনে হয়, পৃথিবী যেন শুধু তাদের জন্য থেমে আছে।
অর্পিত দীপার দিকে তাকিয়ে বললো, “তুমি জানো, দীপা, এই বৃষ্টি আর এই মুহূর্ত আমাকে শুধু একটাই কথা মনে করিয়ে দেয়— তুমি আমার কাছে শুধু একজন স্ত্রী নও, তুমি আমার জীবনের একমাত্র সঙ্গী, আমার ভালোবাসা, আমার বন্ধুও।”
দীপা তার স্বামীর দিকে তাকিয়ে এক টুকরো হাসি দিলো, তার চোখে এক ধরনের অদ্ভুত শান্তি। “আমিও ঠিক তেমনি অনুভব করি, অর্পিত। তুমি ছাড়া আমি কিছুই নই।”
তাদের চারপাশে বৃষ্টি আরো তীব্র হয়ে উঠলো। কিন্তু তারা একে অপরের হাত ধরেই হাঁটছিল, যেন সময় থেমে গেছে। এই ছোট্ট মুহূর্তটা যেন তাদের জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত হয়ে উঠলো।
প্রেম, সমঝোতা, আর একে অপরকে ধারণ করার গভীরতা— এই সন্ধ্যার রোমান্টিকতা শুধু সঙ্গী হয়ে ওঠার কাহিনী নয়, বরং একে অপরের জীবনে বিশ্বাস আর ভালোবাসার পুনঃস্থাপন।