নতুন বউয়ের ঘর। চারপাশে লাল-সোনালি আলোর ঝলকানি। মেঝেতে ফুলের গন্ধ, বাতাসে এক ধরনের মিষ্টি উত্তেজনা। বাইরে টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছে, যেন প্রকৃতিও আজ একটু বেশি রোমান্টিক হয়ে উঠেছে।
অরণ্য দরজার সামনে দাঁড়িয়ে একটু নার্ভাস। তমা বসে আছে খাটের একপাশে, মাথা নিচু, লাজে মুখ ঢাকা ঘোমটায়। এই তো মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেই সাতপাকে বাঁধা পড়েছে ওরা, কিন্তু তবুও মনে হচ্ছে যেন তমাকে নতুন করে চেনা শুরু।
অরণ্য ধীরে ধীরে ঘরে ঢুকে পাশে গিয়ে বসল। কয়েক মুহূর্ত নীরবতা— শুধু বাইরে বৃষ্টির শব্দ আর ওদের হৃদয়ের ধুকপুক।
— “তুমি কি অপ্রস্তুত?” অরণ্য নিচু গলায় জিজ্ঞেস করলো।
তমা একটুও না তাকিয়ে মৃদু হাসলো। ঘোমটার নিচে তার গাল লাল হয়ে আছে।
— “না… মানে… একটু তো হবেই। সব কিছুই তো নতুন।”
অরণ্য একটুখানি এগিয়ে এসে তার হাত ধরলো। তমার হাতটা ঠান্ডা, কিন্তু ছোঁয়ায় এক ধরনের উষ্ণতা।
— “তোমার ভয় লাগছে?”
— “ভয় না, একটু লজ্জা লাগছে।”
অরণ্য হেসে ফেলল, সেই হাসিতে যেন বর্ষার প্রথম দিনের প্রশান্তি। সে ধীরে ধীরে ঘোমটা সরিয়ে দিল। চোখে চোখ পড়তেই এক অদ্ভুত অনুভূতি— লাজ, ভালোবাসা আর এক ধরনের অচেনা আকর্ষণ।
— “তমা, আমি চাই না তুমি আজ রাতটা শুধু নিয়ম মেনে কাটাও। এটা আমাদের প্রথম রাত, আমি চাই এটা হোক মনে রাখার মতো।”
তমা কিছু বলল না। শুধু মাথা নিচু করে রইল। অরণ্য তার চিবুকে আঙুল দিয়ে মুখটা তুলে ধরলো।
— “তোমার চোখে অনেক কথা আছে। আমি কি একটু পড়তে পারি?”
তমা এবার চোখ তুলে তাকালো। সেই চোখে ছিল ভরসা, ছিল এক ধরনের মৌন সম্মতি।
বৃষ্টির শব্দ বেড়ে উঠলো, যেন প্রকৃতি তাদের ভালোবাসায় সুর মিলিয়ে গাইছে। অরণ্য আলতো করে তমার কাঁধে হাত রাখলো। দুজনের নিঃশ্বাস গলা হয়ে এল।
তমা ধীরে ধীরে বলল, “তুমি কি আমাকে ভালোবাসো, অরণ্য?”
— “তোমার চোখে তাকালেই সেটা বোঝা যায় না?”
তমা মুচকি হাসল। তার ঠোঁটে সেই হাসি দেখে অরণ্যের হৃদয় কেঁপে উঠলো।
রাত বাড়তে লাগল। বৃষ্টি থেমে গেল, কিন্তু ঘরের ভিতরে দুই হৃদয়ের মেলবন্ধন শুরু হলো। ভালোবাসা, বিশ্বাস আর আবেগের মিশেলে এক নতুন গল্পের শুরু হলো।
বাসর রাত যেন কোনো গোপন চিঠি— যেখানে প্রতিটি শব্দ অনুভবের, প্রতিটি স্পর্শ এক একটা অঙ্গীকার।
এভাবেই অরণ্য আর তমার প্রথম রাত হয়ে উঠলো এক চিরন্তন স্মৃতি— বৃষ্টিভেজা, ভালোবাসায় মোড়া।